You are currently viewing ডে-কেয়ার নাকি ন্যানি: আপনার সন্তানের যত্নে কোনটি বেছে নিবেন?

ডে-কেয়ার নাকি ন্যানি: আপনার সন্তানের যত্নে কোনটি বেছে নিবেন?

ছোট্ট একটা শিশু যখন আমাদের কোলে আসে, তখন তার দেখাশোনা আর নিরাপত্তাটাই তো সবথেকে জরুরি, তাই না? কিন্তু কর্মজীবী বাবা-মায়ের পক্ষে সারাদিন সন্তানকে কাছে রাখা সবসময় সম্ভব হয় না।

তখন এই ভাবনা আসাটা  স্বাভাবিক, “ন্যানি নাকি ডে-কেয়ার, আপনার সন্তানের যত্নে জন্য কোনটি বেছে নেবেন?

মা-বাবা হিসেবে এই চিন্তায় পড়াটা খুবই  স্বাভাবিক।  কিন্তু একদম চিন্তা করবেন না! এই আর্টিকেলে  আমরা সহজ করে বলব—ন্যানি আর ডে-কেয়ার কী, এদের মধ্যে তফাৎ, ভালো-খারাপ দিক, আর কোনটা আপনার বাচ্চার জন্য সঠিক হবে ।

ন্যানি এবং ডে-কেয়ার: আসুন একটু বিস্তারিত জানি

প্রথমে একটু জেনে নিই, ন্যানি আর ডে-কেয়ার বলতে কী বোঝায় আর এদের মধ্যে আসল তফাৎগুলো কোথায়:

ন্যানি কারা ?

ন্যানি হলেন তারাই যারা আপনার বাড়িতে এসে আপনার বাচ্চার দেখাশোনা করবেন—সারা দিনের জন্যেও হতে পারে, আবার কয়েক ঘণ্টার জন্যেও হতে পারে। তিনি শুধু খাওয়ানো আর ঘুম পাড়ানোই নয়, বাচ্চাদের সাথে খেলবেন আর ছোটখাটো কিছু শেখানোর কাজও করবেন।

একজন ভালো ন্যানি আপনার বাচ্চার প্রতিদিনের রুটিন তৈরি করতে সাহায্য করতে পারেন, তাদের ব্যক্তিগত প্রয়োজন অনুযায়ী যত্ন নিতে পারেন এবং তাদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে বন্ধুর মতো পাশে থাকতে পারেন।

ন্যানির ভালো দিক হল, তিনি আপনার বাচ্চাকে একা সময় দেন, একদম মন দিয়ে খেয়াল রাখেন। এতে আপনার বাচ্চা বিশেষভাবে মনোযোগ পায় এবং দ্রুত শিখতে পারে।

ডে-কেয়ার কী?

ডে-কেয়ার হল একটা সুন্দর গোছানো জায়গা, যেখানে অনেক বাচ্চা একসাথে থাকে। এখানে সবকিছু একটা নির্দিষ্ট নিয়মে চলে—যেমন কখন খাবে, কখন ঘুমাবে, কখন পড়বে আর কখন খেলবে।

সাধারণত কিছু অভিজ্ঞ শিক্ষকরাই বাচ্চাদের দেখাশোনা করেন। ডে-কেয়ারের ভালো দিক হল এখানে বাচ্চারা একসাথে অনেক বন্ধুর সাথে মিশতে পারে। এতে তাদের মধ্যেকার সামাজিক সম্পর্ক তৈরি হয়, তারা একে অপরের সাথে মিশতে ও সহযোগিতা করতে শেখে। ডে-কেয়ারে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষামূলক খেলার সরঞ্জাম ও কার্যকলাপ থাকে যা বাচ্চাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে সাহায্য করে।

বর্তমানে বাংলাদেশে ৬৩টি সরকারি পরিচালিত ডে-কেয়ার সেন্টার রয়েছে এবং বেসরকারি ডে-কেয়ার সেন্টারের সংখ্যা ১০০টির বেশি

এই দুটোর মধ্যে আসল পার্থক্যটা কোথায়, চলুন একটা ছোট্ট ছকে দেখে নিই:

বিষয়ন্যানিডে-কেয়ার
অবস্থানআপনার বাড়িতেনির্দিষ্ট একটি সেন্টারে
খেয়াল রাখাএকজনের উপর পুরো মনোযোগঅনেকের মধ্যে ভাগ করে মনোযোগ দেওয়া হয়
সামাজিকীকরণসীমিতঅনেক বেশি
খরচতুলনামূলক বেশিতুলনামূলক কম
সময়সূচিনমনীয়নির্দিষ্ট সময়
স্বাস্থ্যঝুঁকিকমতুলনামূলক বেশি (সংক্রমণ ইত্যাদি)

নিরাপত্তা আর মনের উপর কেমন প্রভাব ফেলে?

বাচ্চার নিরাপত্তা আর মন ভালো রাখাটা তো আমাদের প্রথম চিন্তা, তাই না? ন্যানি আর ডে-কেয়ার—দুটোর ক্ষেত্রেই কিন্তু নিরাপত্তার ব্যাপারটা আলাদা করে দেখতে হয়।

ন্যানির ক্ষেত্রে আপনি নিজেই সবকিছু দেখভাল করতে পারেন, তবে একজন নতুন মানুষের উপর ভরসা করাটা একটা ঝুঁকির বিষয় হতে পারে। তাই ভালোভাবে খোঁজখবর নেওয়া দরকার। ডে-কেয়ারে অনেক বাচ্চা একসাথে থাকে বলে সবসময় মনোযোগ নাও পাওয়া যেতে পারে, তবে সেখানে প্রশিক্ষিত লোকজন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাধারণত থাকে।

ন্যানির সাথে থাকলে বাচ্চা একজনের সাথে গভীর আর ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তোলে, যা তার মনে সাহস আর বিশ্বাস যোগায়। অন্যদিকে ডে-কেয়ারে বাচ্চারা অনেক বন্ধুর সাথে মেশে, একসাথে খেলাধুলা করে যা তাদের সামাজিক দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে। তারা কিভাবে অন্যদের সাথে মিশতে হয়, কিভাবে নিজেদের জিনিস শেয়ার করতে হয় এবং কিভাবে দলবদ্ধভাবে কাজ করতে হয় তা শেখে।

কত টাকা খরচ হতে পারে?

ন্যানির বেতন তার কাজের অভিজ্ঞতা, তিনি কতক্ষণ কাজ করবেন এবং আপনি কোথায় থাকেন তার উপর নির্ভর করে। সাধারণত বাংলাদেশে একজন অভিজ্ঞ ন্যানির মাসিক বেতন ১৮ হাজার টাকা থেকে শুরু হয়ে ২৫ হাজার টাকা বা তার বেশিও হতে পারে। যদি রাতে থাকার প্রয়োজন হয় বা অন্য কাজও করাতে চান তবে খরচ আরও বাড়বে।

ডে-কেয়ারের খরচ নির্ভর করে আপনার বাচ্চা কতক্ষণ সেখানে থাকবে এবং তারা কী কী সুবিধা দেবে তার উপর। সাধারণভাবে, একটি ভালো মানের ডে-কেয়ারের মাসিক খরচ ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। কিছু ডে-কেয়ারে বিশেষ সুযোগ সুবিধা যেমন ইংরেজি শেখা বা গান শেখার ক্লাস থাকলে খরচ আরও বেশি হতে পারে।

আপনার সংসারের যেমন অবস্থা, তেমন সিদ্ধান্ত…

আপনার সংসারের অবস্থা আর আপনার কী দরকার তার উপর নির্ভর করে ন্যানি বা ডে-কেয়ার কোনটা আপনার জন্য ভালো হবে।

শিশু যত্নের অভাবে  ৫৪% অভিভাবকের কর্মজীবনে অংশগ্রহণের পথে একটি বড় প্রভাব ফেলে, এমনটাই উঠে এসেছে সাম্প্রতিক সমীক্ষায়।

যদি আপনারা দুজনেই চাকরি করেন এবং বাচ্চা দেখার জন্য সবসময় কেউ না থাকে, সেক্ষেত্রে ন্যানি বা ডে-কেয়ার দুটোই খুব দরকারি হতে পারে। আপনার কাজের সময়ের উপর নির্ভর করে আপনি ফুল-টাইম বা পার্ট-টাইম ন্যানি নিতে পারেন অথবা বাচ্চাকে ডে-কেয়ারে দিতে পারেন।

অন্যদিকে, যারা ঘরে বসে কাজ করেন, তাদের হয়তো সবসময় ফুল-টাইম ন্যানির দরকার হয় না। তারা দিনে কয়েক ঘণ্টার জন্য ন্যানি রাখতে পারেন অথবা সপ্তাহে কয়েকদিন বাচ্চাকে ডে-কেয়ারে দিয়ে নিজের কাজ সেরে নিতে পারেন। এতে বাচ্চা অন্যদের সাথে মিশবে এবং আপনার কাজেরও সুবিধা হবে।

কোনটা ঠিক হবে, কিভাবে বুঝবেন?

শেষ পর্যন্ত আপনি ন্যানি রাখবেন নাকি বাচ্চাকে ডে-কেয়ারে দেবেন, সেটা কিন্তু নির্ভর করে আপনার কতটা সময় আছে, আপনার বাজেট কত, আপনার বাচ্চার বয়স আর তার স্বভাব কেমন, আর পরিবারের অন্য সদস্যরা কতটা সাহায্য করতে পারবেন তার উপর।

সবকিছু ভালোভাবে ভেবেচিন্তে আপনার আর আপনার বাচ্চার জন্য যেটা ভালো মনে হয়, সেটাই করবেন। দরকার হলে প্রথমে কিছুদিন ন্যানি রেখে দেখতে পারেন, আবার কিছুদিন ডে-কেয়ারে দিয়ে দেখতে পারেন। এতে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার বাচ্চা কোথায় বেশি স্বস্তি পাচ্ছে।

শেষ কথা: বাচ্চার যত্নে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিন

বাচ্চার যত্ন কিন্তু খুব দরকারি একটা বিষয়। আপনি ন্যানি রাখুন বা ডে-কেয়ারে দিন—সবথেকে ভালো উপায় সেটাই, যেটা আপনার বাচ্চাকে নিরাপদে রাখবে আর তার মনকে ভালো রাখবে। আপনার সংসারের নিয়মকানুন আর বাচ্চার স্বভাব অনুযায়ী একটা বুঝে শুনে সিদ্ধান্ত নিন। আপনার বাচ্চার সুন্দর ভবিষ্যৎ এবং খুশির জীবনই আপনার প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।